বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশ, যেখানে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বেড়ে ওঠা পর্যটনশিল্প রয়েছে। আপনি যদি ঢাকার ব্যস্ত শহর, কক্সবাজারের সুন্দর সমুদ্র সৈকত বা সুন্দরবনের সবুজ বনাঞ্চল দেখতে যান, তবে বিভিন্ন হোটেল চেইন আছে যেটা আরামদায়ক ভাবে থাকার ব্যবস্থা করে। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশের সেরা হোটেল চেইনগুলো সম্পর্কে জানবো, তারা কী ধরনের সুবিধা দেয় এবং কেন সেখানে থাকতে চাইবেন।
কেন বাংলাদেশের হোটেল চেইন ?
হোটেল চেইন মানে দারুণ সেবা, এবং মানের নিশ্চয়তা। এই হোটেলগুলো সাধারণত আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে, তাই আপনি যেকোন শহরে থাকুন না কেন, সব কিছু ভালো পাবেন। আপনি বিলাসবহুল হোটেল, আরামদায়ক থাকা বা বাজেট-ফ্রেন্ডলি অপশন চান, বাংলাদেশের হোটেল চেইনগুলো আপনার প্রয়োজন মেটাতে প্রস্তুত।
১. প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকা
প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ঢাকা বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেল। এটি ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের জন্য জনপ্রিয়।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, এবং বাণিজ্যিক এলাকার কাছাকাছি।
কক্ষ সংখ্যা: ২৭৭টি বিলাসবহুল কক্ষ।
সুবিধা: সুইমিং পুল, জিম, রেস্টুরেন্ট, স্পা, এবং কনফারেন্স হল।
হল রুম : ব্যবসায়িক মিটিং, বিয়ে এবং বিশেষ ইভেন্ট।
২. র্যাডিসন হোটেল গ্রুপ
র্যাডিসন ব্লু হোটেলগুলো বিলাসিতা এবং আরামের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশে র্যাডিসনের দুটি হোটেল আছে—ঢাকা এবং চট্টগ্রামে।
র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন:
অবস্থান: ঢাকার বিমানবন্দরের কাছে।
কক্ষ সংখ্যা: ২০০-এর বেশি আধুনিক কক্ষ।
সুবিধা: গলফ কোর্স, সুইমিং পুল, জিম, রেস্টুরেন্ট।
জনপ্রিয়: ব্যবসায়িক মিটিং এবং বিলাসবহুল থাকার জন্য।
র্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ:
অবস্থান: চট্টগ্রাম, দেশের প্রধান বন্দর শহর।
কক্ষ সংখ্যা: ২৪০টির বেশি কক্ষ, চমৎকার শহরের দৃশ্য সহ।
সুবিধা: রুফটপ পুল, জিম এবং রেস্টুরেন্ট।
জনপ্রিয়: ব্যবসায়ী এবং পর্যটকরা যারা আরাম খুঁজছেন।
৩. ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা একটি ঐতিহ্যবাহী বিলাসবহুল হোটেল, যা ঢাকার কেন্দ্রে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশে অন্যতম পুরনো এবং নামকরা হোটেল।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: ঢাকার কেন্দ্রস্থল, সরকারি অফিস ও প্রধান স্থাপনার কাছে।
কক্ষ সংখ্যা: ২২৬টি সুন্দর কক্ষ ও স্যুইট।
সুবিধা: রুফটপ পুল, স্পা, রেস্টুরেন্ট এবং মিটিং রুম।
জনপ্রিয়: সরকারি মিটিং এবং বিলাসবহুল থাকার জন্য।
৪. লে মেরিডিয়েন ঢাকা (ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল)
লে মেরিডিয়েন ঢাকা ম্যারিয়ট হোটেলের অংশ, যা তার আধুনিক ও চটকদার নকশার জন্য পরিচিত। বিলাসবহুল পর্যটক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয়।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: ঢাকার ব্যবসায়িক কেন্দ্র এবং বিমানবন্দরের কাছে।
কক্ষ সংখ্যা: ৩০৪টি চমৎকার কক্ষ ও স্যুইট।
সুবিধা: রুফটপ পুল, জিম, স্পা, এবং রেস্টুরেন্ট।
জনপ্রিয়: ব্যবসায়ী এবং উচ্চবিত্ত পর্যটকরা যারা আরাম খুঁজছেন।
৫. আমারি ঢাকা
আমারি ঢাকা একটি আধুনিক হোটেল যা গুলশান লেকের সুন্দর দৃশ্য দেয়। এটি ব্যবসায়িক এবং পর্যটকদের জন্য আদর্শ।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: গুলশান, ঢাকার প্রধান কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক এলাকা।
কক্ষ সংখ্যা: ১৩৪টি কক্ষ যা লেক বা শহরের দৃশ্য দেয়।
সুবিধা: রুফটপ পুল, জিম, স্পা, এবং থাই রেস্টুরেন্ট।
জনপ্রিয়: ব্যবসায়িক ভ্রমণ এবং আরামদায়ক ছুটির জন্য।
৬. দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা
দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা বিলাসবহুল এবং আরামের জন্য পরিচিত। এটি ঢাকার গুলশান-২ এলাকায় অবস্থিত এবং ম্যারিয়ট গ্রুপের অংশ।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: গুলশান, দূতাবাস এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্রের কাছে।
কক্ষ সংখ্যা: ২৩৫টি আধুনিক কক্ষ।
সুবিধা: আউটডোর পুল, জিম, স্পা, এবং রেস্টুরেন্ট।
জনপ্রিয়: ব্যবসায়ী ভ্রমণ এবং বিশেষ ইভেন্টের জন্য।
৭. ব্র্যাক ইন
ব্র্যাক, একটি বিখ্যাত এনজিও (অ-সরকারি সংস্থা), তাদের নিজস্ব বাজেট-ফ্রেন্ডলি হোটেল চেইন তৈরি করেছে, যার নাম ব্র্যাক ইন। এটি কম খরচে থাকা খুঁজছেন এমন ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: ঢাকা।
কক্ষ সংখ্যা: মূলত প্রয়োজনীয় সব সুবিধা সহ সাধারণ কক্ষ।
সুবিধা: রেস্টুরেন্ট এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র।
জনপ্রিয়: বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য এবং যারা দীর্ঘমেয়াদে থাকতে চান।
৮. হোটেল সারিনা ঢাকা
হোটেল সারিনা একটি চার তারকা হোটেল, যা কম খরচে আরামদায়ক থাকা প্রদান করে। এটি বিলাসবহুল হোটেলগুলোর তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যের।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: বনানী, ঢাকা।
কক্ষ সংখ্যা: ২০১টি সুন্দরভাবে সাজানো কক্ষ।
সুবিধা: সুইমিং পুল, জিম, স্পা এবং রেস্টুরেন্ট।
জনপ্রিয়: ব্যবসায়ী ভ্রমণকারীরা যারা সাশ্রয়ী খরচে ভাল সেবা চান।
৯. সি পার্ল বিচ রিসোর্ট & স্পা
সি পার্ল বিচ রিসোর্ট & স্পা কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত একটি বিলাসবহুল হোটেল, যা বঙ্গোপসাগরের চমৎকার দৃশ্য প্রদান করে।
বিশেষত্ব:
অবস্থান: ইনানী বিচ, কক্সবাজার।
কক্ষ সংখ্যা: ৪৯৩টি কক্ষ, যার মধ্যে স্যুইট ও ভিলা রয়েছে।
সুবিধা: ওয়াটার পার্ক, ইনফিনিটি পুল, স্পা, এবং ব্যক্তিগত সমুদ্র সৈকত।
জনপ্রিয়: সমুদ্র ভ্রমণ, পরিবার এবং হানিমুনের জন্য।
বাংলাদেশের সেরা হোটেল চেইনের তুলনামূলক টেবিল
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
১. বাংলাদেশের সেরা বিলাসবহুল হোটেল চেইন কোনটি?
প্যান প্যাসিফিক, র্যাডিসন ব্লু, এবং ম্যারিয়ট (লে মেরিডিয়েন) সবচেয়ে ভালো বিলাসবহুল হোটেল চেইন হিসেবে বিবেচিত।
২. কি কোনো বাজেট-ফ্রেন্ডলি হোটেল চেইন আছে?
হ্যাঁ! হোটেল সারিনা এবং ব্র্যাক ইন বাজেট ভ্রমণকারীদের জন্য চমৎকার অপশন।
৩. ব্যবসায়ীদের জন্য কোন হোটেল চেইনটি সেরা?
প্যান প্যাসিফিক, র্যাডিসন ব্লু এবং লে মেরিডিয়েন ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত, তাদের লোকেশন এবং ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধার কারণে।
৪. সমুদ্র ভ্রমণের জন্য কোন হোটেলটি সেরা?
সি পার্ল বিচ রিসোর্ট & স্পা কক্সবাজারে সমুদ্র ভ্রমণের জন্য সেরা হোটেল।
৫. কি কোনো হোটেল চেইন লয়ালটি রিওয়ার্ড প্রোগ্রাম দেয়?
হ্যাঁ, ম্যারিয়ট, র্যাডিসন এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল বড় হোটেল চেইনগুলো লয়ালটি প্রোগ্রাম দেয়, যেখানে আপনি পয়েন্ট অর্জন করে ফ্রি থাকা ও অতিরিক্ত সুবিধা পেতে পারেন।
শেষ কথা
ব্যবসায়িক ভ্রমণ, ছুটি বা বিশেষ ইভেন্টের জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন হোটেল রয়েছে যা আপনার প্রয়োজন মেটাতে প্রস্তুত। প্যান প্যাসিফিক এবং র্যাডিসন ব্লু এর মতো বিলাসবহুল হোটেল থেকে শুরু করে ব্র্যাক ইন এর মতো সাশ্রয়ী অপশন পর্যন্ত, আপনি অবশ্যই আপনার জন্য উপযুক্ত একটি জায়গা পাবেন!